অধ্যায় ১: অভিযান শুরু
রাহুল, একজন যুবক অভিযাত্রী, সবসময় নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং অভিযানের খোঁজে থাকত। তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল একদিন এমন কোনো জায়গায় যাওয়া, যা আগে কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। একদিন, সে তার বন্ধুদের সাথে একটি পুরোনো মানচিত্র খুঁজে পেল, যেখানে একটি অজানা দ্বীপের অবস্থান চিহ্নিত করা ছিল। মানচিত্রটির পাশে লেখা ছিল, “এই দ্বীপে অমূল্য ধন লুকিয়ে আছে, তবে যারা এটি খুঁজতে যাবে, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে বিপদ।”
রাহুল এবং তার বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা এই রহস্যময় দ্বীপে অভিযান চালাবে। রাহুলের সাথে ছিল তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু—অর্পণ এবং স্নেহা। তারা একটি ছোট্ট জাহাজে করে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করল।
অধ্যায় ২: অদ্ভুত দ্বীপ
বহুদিন সমুদ্রে ভেসে থাকার পর, তারা অবশেষে সেই রহস্যময় দ্বীপের কাছে পৌঁছাল। দ্বীপটি ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত ছিল, আর চারপাশে ছিল অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। রাহুলদের মনে কৌতূহল আর উত্তেজনা ছিল, কিন্তু একই সাথে অদ্ভুত এক শীতল আতঙ্কও কাজ করছিল।
দ্বীপে নামার সাথে সাথেই তারা দেখতে পেল, সেখানে কোনো মানুষের চিহ্ন নেই। চারপাশে শুধু ঘন গাছপালা, আর মাঝে মাঝে অদ্ভুত প্রাণীদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। তারা ধীরে ধীরে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকতে লাগল, এবং বুঝতে পারল, এই দ্বীপে কিছু অস্বাভাবিক আছে।
অধ্যায় ৩: অজানা বিপদ
তারা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ করেই অর্পণ মাটিতে একটি পুরোনো পাথরের ফলক দেখতে পেল। ফলকটির উপর খোদাই করা ছিল কিছু অজানা প্রতীক। স্নেহা এই প্রতীকগুলো পরীক্ষা করে বলল, “এগুলো প্রাচীন কোনো সভ্যতার চিহ্ন হতে পারে, যা হাজার বছর আগে এখানে ছিল।” কিন্তু প্রতীকগুলোর অর্থ কেউই বুঝতে পারছিল না।
পথে হাঁটতে হাঁটতে, হঠাৎই রাহুল একটি খাদের পাশে এসে দাঁড়াল। খাদটির নিচে অন্ধকার, আর দূর থেকে হালকা হাওয়ার সাথে অদ্ভুত সুরের মতো শব্দ ভেসে আসছিল। রাহুল মনে করল, হয়তো খাদটির নিচেই লুকিয়ে আছে সেই অমূল্য ধন, যার সন্ধানে তারা এসেছে।
অধ্যায় ৪: রহস্য উদঘাটন
তারা রশি দিয়ে খাদটির নিচে নামার সিদ্ধান্ত নিল। খাদটি বেশ গভীর ছিল, কিন্তু নেমে যাওয়ার পর তারা দেখতে পেল একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। মন্দিরটির ভেতরে ছিল বিশাল একটি মূর্তি, যার চোখের দিকে তাকিয়ে রাহুল অনুভব করল, যেন মূর্তিটি তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মন্দিরের এক কোণে তারা একটি সিন্দুক পেল। সিন্দুকটি খুলতেই ভিতরে দেখা গেল স্বর্ণমুদ্রা, মূল্যবান রত্ন আর একটি পুরনো পুঁথি।
পুঁথিটি হাতে নিয়ে স্নেহা পড়তে শুরু করল, কিন্তু সেই মুহূর্তেই মন্দিরটি কাঁপতে শুরু করল। পাথরের ছাদ থেকে টুকরো টুকরো অংশ ভেঙে পড়তে লাগল, আর চারদিকে গর্জনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। রাহুল বুঝতে পারল, এই ধন তারা খুঁজে পেলেও এটি তাদের জীবন বিপন্ন করছে। দ্রুত তারা ধনসম্পদ নিয়ে মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করল।
অধ্যায় ৫: জীবন-মৃত্যুর লড়াই
বাইরে বেরোনোর পথে, তাদের পিছু নিতে শুরু করল এক অদ্ভুত ছায়ামূর্তি। মূর্তিটি ছিল অত্যন্ত দ্রুতগামী এবং ক্রমশ তাদের কাছাকাছি আসছিল। রাহুলদের পায়ের নিচে মাটি কাঁপছিল, আর তারা প্রাণপণে দৌড়াচ্ছিল। শেষমেশ তারা জঙ্গলের বাইরে এসে পৌঁছল, কিন্তু মূর্তিটি তাদের অনুসরণ করছিল।
জাহাজের কাছে পৌঁছে, তারা তাড়াতাড়ি জাহাজে উঠল এবং সমুদ্রের দিকে ছুটল। জাহাজটি যখন দ্বীপ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল, তখনই সেই মূর্তিটি হঠাৎ থেমে গেল এবং এক প্রবল শব্দে বিস্ফোরিত হল। দ্বীপটি যেন একটি বিশাল শক্তির বিস্ফোরণে নিমজ্জিত হয়ে গেল, আর মূহূর্তের মধ্যেই দ্বীপটি সমুদ্রের তলে তলিয়ে গেল।
উপসংহার
রাহুল এবং তার বন্ধুরা কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিল, কিন্তু তারা জানত যে, তারা এমন একটি অভিজ্ঞতা পেয়েছে যা তাদের জীবনে চিরদিনের জন্য স্মৃতিতে থেকে যাবে। তারা যে ধনসম্পদ নিয়ে এসেছিল, সেটি প্রকৃতপক্ষে একটি অভিশাপ ছিল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, সেই ধন সম্পদকে তারা গবেষণা সংস্থায় দান করবে, যাতে প্রাচীন সভ্যতার রহস্য আরও উদঘাটিত হয়।
এই অভিযানের পর রাহুল আর তার বন্ধুরা বুঝতে পারল, সব ধনসম্পদই মানুষকে সুখ দেয় না। কিছু রহস্য হয়তো জানার জন্য নয়, বরং তা অজানাই থেকে যাওয়া ভালো।