অপেক্ষার শেষে

অপেক্ষার শেষে

অধ্যায় ১: নতুন শুরু

সোহিনী, একজন স্নাতক শিক্ষার্থী, সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে। নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু, সবকিছুই তাকে এক নতুন জীবনের স্বাদ দিচ্ছিল। সে ছিল একজন স্বাধীনমনা মেয়ে, যার জীবন ছিল বই, সঙ্গীত, আর স্বপ্নে পরিপূর্ণ। কিন্তু সে কখনোই প্রেমে পড়েনি। তার জীবন ছিল তার নিজের জগতে সীমাবদ্ধ।

একদিন, কলেজের ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় হঠাৎ করেই তার চোখে পড়ল একজন যুবককে, যার নাম ছিল ঋষভ। ঋষভ ছিল একই কলেজের ছাত্র, কিন্তু সোহিনীর সাথে তার আগে কখনো দেখা হয়নি। ঋষভ ছিল খুবই চুপচাপ, লাজুক প্রকৃতির, এবং সবসময় নিজের মতো থাকতে পছন্দ করত। তার মধ্যে ছিল এক ধরনের মাধুর্য, যা সোহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সোহিনী বুঝতে পারল, তার হৃদয়ে এক নতুন অনুভূতির জন্ম হচ্ছে।

অধ্যায় ২: বন্ধুত্বের সূচনা

সোহিনী এবং ঋষভ ধীরে ধীরে বন্ধু হয়ে উঠল। তারা একসাথে ক্লাস করত, ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিত, আর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করত। তাদের মধ্যে এমন একটি বন্ধুত্ব গড়ে উঠল, যা ছিল খুবই মিষ্টি এবং সরল। সোহিনী দেখল যে, ঋষভ খুব ভালো শ্রোতা এবং খুবই চিন্তাশীল একজন মানুষ। সে ঋষভের সহজ-সরলতা এবং তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল।

কিন্তু সোহিনী বুঝতে পারছিল না যে, সে ধীরে ধীরে ঋষভের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। সে অনেক সময় নিজের অনুভূতিগুলোকে অস্বীকার করত, মনে করত যে, এটি হয়তো শুধুমাত্র বন্ধুত্বের একটি স্তর। কিন্তু তার হৃদয় বলছিল ভিন্ন কথা। ঋষভের উপস্থিতিতে তার হৃদয় দ্রুত বেগে ধুকধুক করতে লাগত, আর সে বুঝতে পারল, সে ঋষভের প্রেমে পড়ে গেছে।

অধ্যায় ৩: অনিশ্চয়তার ছায়া

ঋষভও সোহিনীকে পছন্দ করতে শুরু করেছিল, কিন্তু সে কখনোই তার মনের কথা প্রকাশ করতে সাহস পেত না। তার মনে সবসময় একটি শঙ্কা কাজ করত, যদি সোহিনী তার প্রেমের প্রস্তাবকে অস্বীকার করে? এই ভয়ে ঋষভ তার অনুভূতিগুলোকে নিজের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখত। সে ভাবত, তাদের বন্ধুত্ব হয়তো এই অনুভূতির কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

একদিন, সোহিনী সাহস করে ঋষভের সামনে তার মনের কথা বলতে চাইল, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে ঋষভ হঠাৎ করে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঋষভ জানায় যে, তার পরিবারে কিছু সমস্যার কারণে তাকে কিছুদিনের জন্য বাড়ি যেতে হবে। সোহিনীর মনে হলো, এটাই হয়তো তার সুযোগ। কিন্তু ঋষভের তাড়াহুড়ো দেখে সে নিজের মনের কথা গোপন রাখল।

ঋষভ বাড়ি চলে গেল, আর সোহিনীর মধ্যে এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করতে লাগল। প্রতিটি দিন তাকে যেন আরও বেশি একা করে দিচ্ছিল। সে বুঝতে পারল, সে ঋষভকে কতটা ভালোবাসে।

অধ্যায় ৪: ফিরে আসা

কয়েক সপ্তাহ পর, ঋষভ ফিরে এল। সোহিনীর মন আনন্দে ভরে উঠল, কিন্তু একই সাথে তার মনে শঙ্কা ছিল, সে কীভাবে তার মনের কথা ঋষভকে বলবে। ঋষভও ফিরে এসে সোহিনীকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল। তারা আবার আগের মতোই একসাথে সময় কাটাতে শুরু করল, কিন্তু ঋষভের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করল সোহিনী। ঋষভ আগের মতো হাসত না, তার মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করত।

এক সন্ধ্যায়, সোহিনী ঋষভকে তার প্রিয় কফিশপে ডেকে নিল। সেখানে তারা চুপচাপ বসেছিল, কফির কাপ হাতে নিয়ে। সোহিনী তার মনের সমস্ত শক্তি জড়ো করে ঋষভকে বলল, “ঋষভ, আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।”

ঋষভ একটু চমকে উঠল, কিন্তু শান্তভাবে বলল, “হ্যাঁ, বলো।”

সোহিনী গভীর শ্বাস নিল এবং বলল, “ঋষভ, আমি জানি না তুমি কেমন অনুভব করো, কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি প্রতিদিন তোমার সাথে সময় কাটাতে ভালবাসি, তোমার পাশে থাকতে ভালবাসি। আমি জানি, আমরা অনেক ভালো বন্ধু, কিন্তু আমার মনের গভীরে আমি তোমার চেয়ে বেশি কিছু অনুভব করি।”

অধ্যায় ৫: প্রেমের স্বীকৃতি

ঋষভ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। সোহিনীর মনে অস্থিরতা ছিল, সে অপেক্ষা করছিল ঋষভের উত্তর শোনার জন্য। অবশেষে ঋষভ মুখ খুলল, তার কণ্ঠস্বর ছিল মৃদু এবং গভীর।

“সোহিনী,” ঋষভ বলল, “তুমি জানো না কতদিন ধরে আমি তোমাকে এই কথাটা বলতে চেয়েছি। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু আমার মনের ভয়ে কখনোই তা বলতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম, যদি তুমি আমাকে গ্রহণ না করো? যদি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়? কিন্তু আজ তোমার কথাগুলো শোনার পর আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।”

সোহিনীর চোখে আনন্দের অশ্রু জমে উঠল। সে বুঝতে পারল, তাদের ভালবাসা একে অপরের জন্যই তৈরি হয়েছে। তারা দুজনই বুঝল যে, প্রেম কেবলমাত্র কথায় নয়, অনুভূতির গভীরতায় পরিপূর্ণ।

উপসংহার

সেই দিন থেকেই সোহিনী এবং ঋষভ একে অপরের জীবনে প্রেমের রঙে রঙিন হয়ে উঠল। তারা একসাথে সময় কাটাত, একে অপরের স্বপ্ন এবং লক্ষ্যকে সম্মান করত, এবং সবচেয়ে বড় কথা, তারা একে অপরকে নিজের মত করে ভালবাসত। তাদের সম্পর্ক ছিল নির্ভেজাল, মিষ্টি এবং গভীর, যা সময়ের সাথে সাথে আরও দৃঢ় এবং অটুট হয়ে উঠল।

অপেক্ষার শেষে তারা দুজনই খুঁজে পেল সেই ভালোবাসা, যা তারা চিরকাল অনুভব করে আসছিল। তাদের প্রেমের কাহিনী প্রমাণ করল, ভালবাসা সবসময়ই সময়ের অপেক্ষায় থাকে, এবং যখন তা আসে, তখন তা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আরও সুন্দর করে তোলে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *