অধ্যায় ১: অজানা উদ্দেশ্য
সায়ান, একজন বুদ্ধিমান ও সাহসী যুবক, সমুদ্র অভিযানে আগ্রহী ছিল। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল পৃথিবীর অজানা সাগরগুলোতে অভিযান চালানো এবং সেগুলোর রহস্য উদঘাটন করা। একদিন সে একটি প্রাচীন নৌকা আবিষ্কারের কথা শুনল, যা বহু বছর আগে সমুদ্রের মাঝে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে গিয়েছিল। গল্পটি শুনে সায়ান উত্সাহী হয়ে উঠল এবং সেই নৌকার রহস্য উন্মোচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হল।
সায়ান কিছু গবেষণার পর জানতে পারল যে, নৌকাটি অদ্ভুত এক জায়গায় নিখোঁজ হয়েছিল, যাকে স্থানীয়রা “মৃত্যুর সাগর” বলে ডাকে। সেই সাগরে বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল এবং যারা ফিরে এসেছে তারা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু সায়ানের মনের গভীরে ছিল এক অদম্য কৌতূহল, যা তাকে থামাতে পারল না। সে তার তিনজন বন্ধুকে—রিয়া, অভি, এবং সমীর—নিয়ে সেই সাগরযাত্রায় বেরিয়ে পড়ল।
অধ্যায় ২: মৃত্যু-সাগরের পথে
সায়ান এবং তার বন্ধুরা একটি ছোট্ট নৌকায় সমুদ্রের পথে রওনা দিল। তাদের নৌকাটি একপ্রকার আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত ছিল, যা তাদের যাত্রাকে সহজতর করার জন্য যথেষ্ট ছিল। প্রথম কিছুদিন সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। তারা সমুদ্রের বিশালতার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল এবং সেই সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। কিন্তু যাত্রার চতুর্থ দিন থেকেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল।
রাতের বেলা তারা লক্ষ্য করল যে, আকাশের তারা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে, আর সমুদ্রের পানি অদ্ভুতভাবে গাঢ় কালো হয়ে উঠছে। চারপাশে এক ধরনের নিস্তব্ধতা, শুধু মাঝে মাঝে ভেসে আসছিল এক অজানা হাওয়ার শব্দ। অভি বলল, “আমরা কি সঠিক পথেই আছি? এই জায়গাটা খুবই অদ্ভুত লাগছে।”
সায়ান কম্পাস দেখে নিশ্চিত করল, তারা সঠিক পথেই আছে। কিন্তু তার মনের এক কোণে একটি অজানা শঙ্কা কাজ করছিল।
অধ্যায় ৩: ভয়ঙ্কর রাত
রাত গভীর হতে শুরু করল, আর সায়ান এবং তার দল অদ্ভুত এক অনুভূতি টের পেতে লাগল। তারা হঠাৎ দেখল, তাদের নৌকার চারপাশে ঘন কুয়াশা ঘিরে ধরছে। কুয়াশার মধ্য থেকে ভেসে আসছিল এক অদ্ভুত সুরের মতো শব্দ, যা মনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। রিয়া বলল, “আমাদের এখান থেকে ফিরে যাওয়া উচিত। এটা ঠিক জায়গা নয়।”
কিন্তু সায়ান এখনও নিজের লক্ষ্য থেকে বিচলিত হয়নি। সে সবার মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ঠিক তখনই, হঠাৎ করে তাদের নৌকা ভয়ানকভাবে কাঁপতে শুরু করল। সমীর আতঙ্কিত হয়ে বলল, “আমাদের কি কিছু আঘাত করেছে?” তারা নীচে তাকিয়ে দেখল, কিছু বিশাল আকৃতির ছায়া নৌকার নিচে দিয়ে চলাফেরা করছে।
অধ্যায় ৪: প্রাণঘাতী বিপদ
সায়ান দ্রুত সবাইকে সতর্ক করল, কিন্তু ঠিক তখনই তাদের নৌকার একটি দিক থেকে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগল। তারা দেখতে পেল, একটি বিশাল সাগর দৈত্য তাদের নৌকাকে আক্রমণ করছে। দৈত্যটি ছিল বিশাল এবং তার চোখ থেকে আগুনের মতো আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল। তারা বুঝতে পারল, এটি কোনো সাধারণ সাগর দৈত্য নয়।
অভি দ্রুত নৌকা চালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু দৈত্যটি তাদের পিছু নিল। সায়ান তার বুদ্ধি খাটিয়ে একদম শেষ মুহূর্তে নৌকার পথ পরিবর্তন করল, আর দৈত্যটি তাদের অল্পের জন্য ছুঁতে পারল না। কিন্তু তাদের পালানোর পথ একদম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কুয়াশা আরও ঘন হয়ে উঠছিল, আর তাদের চারপাশে ওই ভয়ানক সুরের শব্দ ক্রমাগত বাড়ছিল।
অধ্যায় ৫: রহস্য উদঘাটন
সায়ান বুঝতে পারল, তাদের বাঁচার জন্য দ্রুত কিছু করতে হবে। সে নৌকার পিছনে রাখা পুরোনো মানচিত্রের দিকে তাকাল, আর সেখানে একটি অদ্ভুত প্রতীক দেখতে পেল, যা মৃত্যুর সাগরের ঠিক মাঝখানে চিহ্নিত করা ছিল। সায়ান মানচিত্রের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে দেখল, আর বুঝতে পারল, সেই প্রতীকটি আসলে একটি সুরক্ষা চিহ্ন।
সায়ান দ্রুত প্রতীকটি আঁকা অংশটি কেটে নৌকার সামনের দিকে বেঁধে দিল। মুহূর্তের মধ্যেই, সেই সুরক্ষা চিহ্ন থেকে এক তীব্র আলো বের হতে লাগল, যা সমস্ত কুয়াশাকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। সাগর দৈত্যটি চিৎকার করে তাদের কাছ থেকে দূরে সরে গেল।
উপসংহার
সায়ান এবং তার বন্ধুরা শেষমেশ মৃত্যুর সাগর থেকে নিরাপদে ফিরে আসতে পারল। তারা জানত, তারা খুব বড় এক বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। তারা ফিরে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে নিল। সায়ান বুঝতে পারল যে, জীবনের প্রতিটি যাত্রায় শুধু সাহস নয়, সঠিক জ্ঞান এবং প্রাচীন প্রজ্ঞারও প্রয়োজন।
এই অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে চিরকাল মনে রাখার মতো একটি অধ্যায় হয়ে রইল। তাদের সাগরযাত্রা শুধু ভয় এবং আতঙ্ক নয়, বরং বুদ্ধি, সাহস, এবং বন্ধুত্বেরও এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।