নিশির ডাক

নিশির ডাক

অধ্যায় ১: রহস্যময় গ্রাম

শহরের কোলাহল থেকে দূরে, একটি ছোট্ট গ্রামের নাম ছিল নিশিগ্রাম। গ্রামটি ছিল অপূর্ব সুন্দর, কিন্তু তার সাথে জড়িয়ে ছিল এক গভীর রহস্য। নিশিগ্রামে রাত হলে লোকেরা কখনোই ঘরের বাইরে বের হতো না। তাদের বিশ্বাস ছিল, রাতে “নিশি” নামে একটি ভৌতিক আত্মা গ্রামে ঘোরাফেরা করে। যারা নিশির ডাক শুনত, তারা আর কখনো ফিরে আসত না।

অধ্যায় ২: আগন্তুক

শুভ্র, একজন তরুণ সাংবাদিক, এই গল্পটি শুনে খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠল। তার মনে হল, এই রহস্যের পেছনের সত্যিটা বের করতে হবে। শুভ্র ঠিক করল যে, সে নিশিগ্রামে গিয়ে রাত কাটাবে এবং সেখানে যা ঘটছে তা নিজ চোখে দেখবে। গ্রামের প্রবেশপথে পৌঁছানোর পর, স্থানীয় লোকেরা তাকে সাবধান করে দিল। তারা বলল, “তুমি যদি নিশির ডাক শুনো, তাহলে কোনোভাবেই তাকে অনুসরণ কোরো না।”

কিন্তু শুভ্র বিশ্বাস করত না যে, এমন কিছু হতে পারে। সে হাসি দিয়ে লোকদের ভীতি উপেক্ষা করে এগিয়ে গেল। সন্ধ্যা হয়ে এলো, আর গ্রামটি যেন এক রহস্যময় চাদরে আবৃত হয়ে গেল। চারপাশে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা, শুধু মাঝে মাঝে কেবল ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

অধ্যায় ৩: নিশির সাথে সাক্ষাৎ

রাত গভীর হলে, শুভ্র একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিল। সে ঘরে বসে লিখতে লাগল তার অভিজ্ঞতা। হঠাৎ করেই, বাইরে থেকে এক মেয়ের মিষ্টি কণ্ঠে ডাক শোনা গেল, “শুভ্র, বাইরে এসো।” শুভ্র প্রথমে একটু চমকে উঠল, কারণ সে নিশ্চিত ছিল, এই গ্রামের কেউ তার নাম জানে না। কৌতূহলী হয়ে, সে দরজা খুলে বাইরে গেল।

বাইরে গিয়ে সে দেখল, এক সাদা পোশাক পরা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি অত্যন্ত সুন্দর, কিন্তু তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত শূন্যতা। মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, “আমার সাথে এসো।” শুভ্র মেয়েটির পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করল। কিছুদূর এগোতেই সে বুঝতে পারল, গ্রামটি আরও অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি তাকে গ্রামের বাইরে এক গভীর বনের দিকে নিয়ে যেতে লাগল।

অধ্যায় ৪: ভয়ংকর সত্য

শুভ্র হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। তার মনে পড়ল গ্রামবাসীদের সতর্কবাণী। সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে?” মেয়েটি উত্তর দিল, “আমি নিশি।” শুভ্রের শরীর শীতল হয়ে উঠল। মেয়েটি ধীরে ধীরে তার দিকে ঘুরল, আর তখনই শুভ্র দেখতে পেল তার মুখ বিকৃত হয়ে গেছে। মেয়েটির চোখে ছিল এক ভয়ংকর আলো, যা কোনও জীবিত মানুষের হতে পারে না।

শুভ্র ভয় পেয়ে দৌড়াতে শুরু করল, কিন্তু চারদিকে কুয়াশা ঘনিয়ে এল, আর নিশির হাসির শব্দ যেন তার চারপাশে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। সে যেদিকেই দৌড়াল, সেদিকেই যেন নিশি তার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছিল। শুভ্র বুঝতে পারছিল না, কীভাবে এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে।

অধ্যায় ৫: মুক্তি

শেষমেশ, শুভ্রের মনে পড়ল তার সঙ্গে থাকা একটি পুরোনো লকেটের কথা, যা তার ঠাকুমা তাকে দিয়েছিল। ঠাকুমা বলেছিল, “যখনই বিপদে পড়বে, এই লকেটটি সঙ্গে রাখবে। এটি তোমাকে সুরক্ষা দেবে।” শুভ্র লকেটটি বের করে নিশির দিকে তাক করল। লকেট থেকে এক উজ্জ্বল আলো বের হতে লাগল, আর নিশি কাতর হয়ে চিৎকার করতে লাগল। মুহূর্তেই, নিশি কুয়াশার সাথে মিলিয়ে গেল, আর রাতের অন্ধকার সরে গিয়ে প্রভাতের আলো ফুটে উঠল।

উপসংহার

শুভ্র নিশিগ্রাম থেকে ফিরে এসে এই ঘটনা লিখে প্রকাশ করল। সে বুঝতে পারল, কিছু রহস্য থেকে দূরে থাকাই ভালো, কারণ সবকিছু ব্যাখ্যা করা যায় না। আর সেই দিন থেকে, নিশিগ্রামে আর কখনও নিশির দেখা মেলেনি। তবে গ্রামবাসীরা এখনও রাতে সতর্ক থাকে, কারণ তারা জানে, নিশির মতো কিছু ভয়ংকর শক্তি সবসময়ই কোন না কোনভাবে প্রহরায় থাকে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *