মাটির দোয়াত

মাটির দোয়াত

অধ্যায় ১: গ্রামীণ জীবনের সুখ

গ্রামের এক কোণে একটি ছোট্ট মাটির বাড়ি। সেখানে বাস করত কিশোর নামের একটি ছেলে। কিশোর ছিল খুবই চঞ্চল, কৌতূহলী এবং স্বপ্নবাজ। তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল গ্রামের মাঠে দৌড়ানো, নদীর ধারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কল্পনার জগত তৈরি করা। কিন্তু তার জীবনে একটাই অভাব ছিল—সে পড়াশোনায় তেমন আগ্রহী ছিল না।

কিশোরের বাবা-মা খুবই পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। তারা কিশোরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তারা চাইতেন কিশোর বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে একজন সম্মানিত মানুষ হবে। কিন্তু কিশোরের মন পড়াশোনায় ছিল না। সে সবসময় ভাবত, বই পড়ে কী হবে? মাঠে দৌড়ানো, নদীতে সাঁতার কাটা, আর গাছে চড়া—এই তো জীবনের আসল আনন্দ।

অধ্যায় ২: মাটির দোয়াত

একদিন কিশোরের বাবা বাড়িতে একটি মাটির দোয়াত নিয়ে এলেন। দোয়াতটি ছিল গ্রামের মাটি দিয়ে তৈরি, খুবই সাধারণ, কিন্তু সুন্দরভাবে আঁকা। কিশোরের বাবা সেই দোয়াতটি কিশোরের পড়ার টেবিলে রেখে বললেন, “কিশোর, এই দোয়াতটি তোমার জন্য। আমি চাই তুমি এতে প্রতিদিন একটু করে লিখবে।”

কিশোর প্রথমে দোয়াতটি দেখে খুবই মুগ্ধ হলো। সে ভাবল, এই সুন্দর দোয়াতটি দিয়ে সে কীভাবে লিখবে? কিন্তু তার বাবা বললেন, “এই দোয়াতটি শুধু একটি দোয়াত নয়, এটি তোমার জীবনের প্রতীক। যদি তুমি এর মধ্যে প্রতিদিন কিছু লিখতে পারো, তবে তোমার জীবনও একদিন এমন সুন্দর হয়ে উঠবে।”

কিশোর বাবার কথা শুনে একটু অবাক হল। সে বুঝতে পারল না যে, তার বাবা কেন এটি বলছেন। তবুও সে প্রতিদিন একটু একটু করে সেই দোয়াতটি ব্যবহার করে লিখতে শুরু করল। সে প্রথমে শুধু নাম লিখত, তারপর ধীরে ধীরে কিছু ছোট ছোট বাক্য, তারপর আস্তে আস্তে গল্প লিখতে শিখল।

অধ্যায় ৩: লেখার আনন্দ

কিশোর প্রতিদিন দোয়াতের কালিতে তার লেখার অভ্যাস বাড়াতে লাগল। ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল যে, লেখার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ রয়েছে। তার মনের ভাবনা, কল্পনা, এবং অনুভূতিগুলো সবই সে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারছে। সে বুঝতে পারল, তার নিজের মধ্যে কত কিছু লুকিয়ে রয়েছে যা সে আগে কখনোই বুঝতে পারেনি।

কিশোরের লেখা ধীরে ধীরে তার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে শুরু করল। সে আরও শান্ত, আরও মনোযোগী, এবং আরও ধৈর্যশীল হয়ে উঠল। সে বুঝতে পারল যে, পড়াশোনার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ রয়েছে, যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি। তার দোয়াতটি এখন আর শুধু একটি মাটির পাত্র নয়, বরং তার জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

অধ্যায় ৪: সফলতার পথে

কয়েক বছর পর, কিশোর বড় হয়ে গেল। সে গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে শহরে গিয়ে কলেজে ভর্তি হলো। সেখানে সে তার লেখার দক্ষতা আরও বাড়াতে লাগল। সে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করল, এবং একদিন তার লেখা গল্প একটি পুরস্কারও জিতল।

কিশোর তখন বুঝতে পারল যে, তার বাবার সেই মাটির দোয়াতই তাকে জীবনে সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সেই দোয়াতটি তাকে শিখিয়েছে ধৈর্য, অধ্যবসায়, এবং নিজের ভেতরের প্রতিভাকে কিভাবে কাজে লাগাতে হয়।

উপসংহার

কিশোর এখন একজন সম্মানিত লেখক। তার লেখা বইগুলো শুধু তার দেশের মধ্যে নয়, বিদেশেও জনপ্রিয়। কিশোর তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সেই মাটির দোয়াতটির কথা মনে করে। সে বুঝতে পারে যে, জীবনেও যেমন কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার।

কিশোরের গল্প আমাদের শেখায় যে, জীবনে কোনো কাজই ছোট নয়। যদি আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে কোনো কাজে মনোনিবেশ করি, তবে সেই ছোট কাজগুলোই একদিন বড় সাফল্যে পরিণত হয়। মাটির দোয়াতের মতোই, আমাদের জীবনেও প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারি।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *