অধ্যায় ১: একটি ছোট্ট গ্রাম
দূরবর্তী এক গ্রামে বাস করত রবি নামের একটি ছেলে। রবির বাবা ছিলেন গ্রামের একমাত্র মৃৎশিল্পী। তারা খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করত, কিন্তু রবির বাবার কাজ ছিল তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মাটি দিয়ে বিভিন্ন সুন্দর জিনিস তৈরি করতেন—মাটির পাত্র, প্রদীপ, মূর্তি, এবং আরও অনেক কিছু। ছোটবেলা থেকেই রবি তার বাবাকে মাটি দিয়ে শিল্প তৈরি করতে দেখেছে, এবং তার মধ্যেও এই কাজের প্রতি এক ধরনের আগ্রহ জন্মেছে।
অধ্যায় ২: বাবার স্বপ্ন
রবির বাবা চেয়েছিলেন যে, তার ছেলে লেখাপড়া করে জীবনে বড় হবে এবং শহরে গিয়ে ভালো কোনো চাকরি করবে। তিনি জানতেন যে, মৃৎশিল্প একটি কঠিন পেশা, এবং এতে জীবিকা নির্বাহ করা বেশ কঠিন। কিন্তু রবি চেয়েছিল তার বাবার মতোই মাটির শিল্পী হতে। সে বাবার পাশে বসে মাটি কাঁদতে শিখত, মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করত। তার বাবাও তার আগ্রহ দেখে খুশি হতেন, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন রবি তার নিজের পছন্দমতো পথ খুঁজে নিক।
অধ্যায় ৩: বাবার মৃত্যু
একদিন হঠাৎ করেই রবির বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি তার সারা জীবনের কাজগুলো রবি এবং তার মায়ের হাতে রেখে চলে গেলেন। রবির জীবনে এই ঘটনা ছিল এক বিশাল আঘাত। সে তার বাবাকে খুবই ভালোবাসত এবং তাকে হারিয়ে সে একেবারে ভেঙে পড়ল।
কিন্তু জীবনের তাগিদে রবিকে আবার উঠে দাঁড়াতে হলো। তার সামনে তখন দুটি পথ ছিল—একটি হল লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া, আরেকটি হল বাবার মৃৎশিল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়া। রবি বাবার স্মৃতির কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিল, সে বাবার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অধ্যায় ৪: সংগ্রামের দিন
বাবার কাজ চালিয়ে যেতে গিয়ে রবি প্রথমে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হলো। তার তৈরি মাটির জিনিসপত্র তেমন বিক্রি হত না। গ্রামের মানুষজন তার বাবার মতো তার কাজে ভরসা করতে পারত না। তাছাড়া রবি তখনো মাটির কাজ পুরোপুরি শিখতে পারেনি। তার অনেক জিনিস তৈরি করতে গিয়ে ভেঙে যেত বা ভালো না হত।
কিন্তু রবি হাল ছাড়ল না। সে প্রতিদিন আরও পরিশ্রম করতে লাগল, আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ শিখতে লাগল। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, সে নিজেকে উৎসর্গ করল তার বাবার কাজকে রক্ষা করার জন্য। ধীরে ধীরে তার কাজের মান বাড়তে লাগল।
অধ্যায় ৫: সফলতার আলোকরশ্মি
কয়েক মাস পরে, রবির তৈরি মাটির প্রদীপগুলো গ্রামের মেলায় প্রদর্শিত হলো। সেখানে শহর থেকে আসা এক ব্যবসায়ী রবির কাজ দেখে মুগ্ধ হলেন এবং অনেকগুলো প্রদীপ একসাথে কিনে নিলেন। তিনি রবিকে বললেন, “তুমি তোমার বাবার মতোই প্রতিভাবান। আমি চাই তুমি আমার জন্য আরও কিছু প্রদীপ তৈরি করো, আমি শহরে নিয়ে গিয়ে সেগুলো বিক্রি করব।”
রবি বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, তার কাজ এতদূর পৌঁছেছে। তার চোখে জল এসে গেল, কিন্তু সেই জল ছিল আনন্দের। তার বাবার স্মৃতি আর তার নিজের পরিশ্রম একসাথে মিলে তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।
উপসংহার
রবি এখন একজন সফল মৃৎশিল্পী। তার তৈরি মাটির প্রদীপগুলো শহরে এবং গ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়। সে তার বাবার কাজকে আরও বড় করে তুলেছে এবং তার পরিবারের সম্মান রক্ষা করেছে।
এই গল্প আমাদের শেখায় যে, জীবনে কঠিন পরিস্থিতি আসতে পারে, কিন্তু যদি আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির রেখে, পরিশ্রম আর অধ্যবসায় নিয়ে এগিয়ে যাই, তবে সেই পরিস্থিতিও একদিন সাফল্যের আলোকে রূপান্তরিত হয়। রবির গল্প আমাদের শিখায় যে, নিজের বিশ্বাস এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে, জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।