অধ্যায় ১: শুরু
শুভ নামের এক যুবক ছিল, যে তার বন্ধুরা এবং পরিবারকে নিয়ে শহরে বসবাস করত। তার জীবন ছিল সাধারণ এবং শান্তিপূর্ণ। একদিন, অফিসের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে শুভ তার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। গ্রামটি ছিল দূরবর্তী এবং জনবিরল, কিন্তু শুভর শৈশবের অনেক স্মৃতি সেখানে ছিল। গ্রামের বাড়িটি অনেক পুরোনো এবং কিছুটা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। যদিও শুভ সেখানে বহু বছর পর যাচ্ছিল, তবু তার মনে ছিল এক অজানা টান।
অধ্যায় ২: অদ্ভুত ঘটনা
বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকেই শুভ কিছু অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করতে শুরু করল। সন্ধ্যা নামতেই বাড়িটি এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় ভরে উঠল। বাতাসে যেন অজানা এক শীতল স্পর্শ ছিল, যা তার মনকে অস্থির করে তুলছিল। প্রথম রাতে, শুভ যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন সে হঠাৎ শুনতে পেল দরজার কাছে কারো পায়ের শব্দ। কিন্তু দরজার বাইরে গিয়ে কেউকে দেখল না।
শুভ ভেবেছিল, হয়তো তার মনের ভুল, তাই বেশি ভাবল না। কিন্তু পরের দিন রাতেও সেই একই শব্দ শুনতে পেল। এইবার সে মনে একটু ভয় পেতে শুরু করল, তবে ভয়কে পাত্তা না দিয়ে সে ঘুমানোর চেষ্টা করল।
অধ্যায় ৩: অজানা আতঙ্ক
তৃতীয় রাতে শুভ গভীর ঘুমে ছিল, হঠাৎ করেই এক তীব্র ঠান্ডা বাতাস তার ঘুম ভেঙে দিল। সে উঠে দেখে ঘরের সব জানালা বন্ধ, তবুও যেন ঘরের ভেতরে হিমশীতল বাতাস বইছে। ঘরের চারপাশে তাকিয়ে শুভ দেখতে পেল, জানালার পাশে এক ধূসর ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। মূর্তিটি ধীরে ধীরে শুভর দিকে এগিয়ে আসছিল। শুভ শীতল আতঙ্কে জমে গেল, সে বুঝতে পারছিল না কী করবে।
মূর্তিটি শুভর একদম সামনে এসে দাঁড়াল, আর সেই মুহূর্তে শুভর মনে পড়ল তার দাদার কথা। তার দাদা এই বাড়িতে থাকতেন এবং মারা যাওয়ার পর থেকে কেউ এই বাড়িতে ছিল না। শুভর মনে হলো, হয়তো এই আত্মা তার দাদার হতে পারে। মূর্তিটি কোনো কথা বলল না, কিন্তু শুভর দিকে এক গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। শুভ তখন মনকে শক্ত করে বলল, “কে তুমি? তুমি আমার দাদার আত্মা কি না?”
অধ্যায় ৪: রহস্য উদঘাটন
মূর্তিটি কোনো উত্তর না দিয়ে হঠাৎ করেই জানালার বাইরে চলে গেল। শুভ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার পেছনে দৌড়াল, কিন্তু বাইরে গিয়ে কিছুই দেখতে পেল না। এরপর সে গ্রামের প্রবীণদের কাছে গেল এবং তাদের এই অদ্ভুত ঘটনার কথা জানাল। প্রবীণরা শুভকে বলল, “তোমার দাদার মৃত্যুর পর থেকে এই বাড়িতে কেউ ছিল না। কিন্তু গ্রামে প্রচলিত আছে যে, যারা তাদের মনের কোনও ইচ্ছা পূর্ণ না করে মারা যায়, তাদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়।”
শুভ তখন বুঝতে পারল, তার দাদা হয়তো এই বাড়িতে কোনো কারণে শান্তি পায়নি। সে দ্রুত বাড়িতে ফিরে গেল এবং তার দাদার পুরনো একটি বাক্স খুঁজে পেল। বাক্সের ভেতরে সে একটি চিঠি পেল, যেখানে লেখা ছিল, “শুভ, আমার মৃত্যুর পর এই বাড়িটি গ্রামের গরিবদের দান করে দিও। আমি চেয়েছিলাম, এই বাড়ি মানুষের উপকারে আসুক।”
অধ্যায় ৫: শান্তির পরিণতি
শুভ দ্রুত বাড়িটি গরিবদের দান করার ব্যবস্থা করল। সেই রাতেই, শুভ আবার সেই ধূসর মূর্তিকে দেখতে পেল, কিন্তু এবার মূর্তিটির চোখে শান্তির ঝিলিক ছিল। মূর্তিটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল এবং তারপর থেকে আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটেনি।
উপসংহার
শুভ বুঝতে পারল, মৃতদের আত্মা তখনই শান্তি পায় যখন তাদের শেষ ইচ্ছা পূর্ণ হয়। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল, মানুষের অন্তিম ইচ্ছা পূরণে জীবিতদের দায়িত্ব আছে। এবং সেই রাতে, শুভর মনে আর কোনো ভয় ছিল না, বরং ছিল এক গভীর প্রশান্তি।